আর্থ্রাইটিস ও ব্যায়াম: কোন ব্যায়াম করবেন, কোনটা এড়িয়ে চলবেন?

আর্থ্রাইটিসের ব্যথার ভয়ে ব্যায়াম করছেন না? জেনে নিন কোন ব্যায়াম আপনার জন্য নিরাপদ ও উপকারী। এই ব্লগে সহজ কিছু ব্যায়ামের চিত্রসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

TEAM ATIQUZZAMAN

10/28/20251 min read

a person working out in a gym
a person working out in a gym

অনেকের মনেই একটা ভুল ধারণা আছে যে আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টে ব্যথা থাকলে বুঝি ব্যায়াম করা উচিত নয়। আসলে, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। চিকিৎসকরা এখন বলেন, সঠিক ধরনের ব্যায়াম আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম জয়েন্টের ব্যথা কমাতে, নমনীয়তা বাড়াতে এবং পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তবে, সব ধরনের ব্যায়াম আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত নয়। এই ব্লগে আমরা দেখব কোন ধরনের ব্যায়ামগুলো আপনার জন্য উপকারী এবং কোনগুলো এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে যারা নতুন ব্যায়াম শুরু করছেন তাদের জন্য।

আর্থ্রাইটিসে ব্যায়ামের উপকারিতা

সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি আর্থ্রাইটিসের কারণে হওয়া অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন:

  • ব্যায়াম জয়েন্টগুলোকে সচল রাখে এবং stiffness বা শক্তভাব কমায়।

  • শক্তিশালী পেশী জয়েন্টগুলোকে সাপোর্ট দেয় এবং তাদের উপর চাপ কমায়।

  • ব্যায়াম শরীরের ভারসাম্য বাড়ায়, যা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

  • ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে জয়েন্টের উপর চাপ কমে।

  • ব্যায়াম মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায়, যা আর্থ্রাইটিসের রোগীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ

যে ব্যায়ামগুলো আপনার জয়েন্টের জন্য নিরাপদ

যারা নতুন ব্যায়াম শুরু করছেন, তাদের জন্য কিছু সহজ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যায়াম নিচে দেওয়া হলো। এই ব্যায়ামগুলো জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে না।

১. হালকা কার্ডিও বা অ্যারোবিক ব্যায়ামঃ

এই ধরনের ব্যায়াম হৃদস্পন্দন বাড়ায় কিন্তু জয়েন্টের উপর চাপ কমাতে সাহাজ্য়য্য করে-

  • হাঁটা: প্রতিদিন ৩০ মিনিট হালকা গতিতে হাঁটা একটি চমৎকার ব্যায়াম। এটি শরীরের সমস্ত জয়েন্ট সচল রাখে।

  • সাঁতার: সাঁতার আর্থ্রাইটিসের রোগীদের জন্য সেরা ব্যায়ামগুলোর একটি। পানির মধ্যে শরীরের ওজন কম অনুভূত হয়, ফলে জয়েন্টের উপর চাপ পড়ে না।

  • সাইক্লিং: একটি বাইসাইকেল ১০-১৫ মিনিট প্রতিদিন আস্তে আস্তে চালালে হাঁটুর উপর চাপ না দিয়ে পেশী শক্তিশালী করা যায়।

২. স্ট্রেচিং ও নমনীয়তার ব্যায়ামঃ

জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য স্ট্রেচিং অপরিহার্য।

  • হাতের আঙুলের ব্যায়াম: হাতের আঙুলগুলোকে মুঠো করুন এবং আবার সোজা করুন। এটি কয়েকবার করুন।

  • ঘাড়ের স্ট্রেচিং: ধীরে ধীরে মাথা এক পাশ থেকে অন্য পাশে কাত করুন।

  • হাঁটুর স্ট্রেচিং: মেঝেতে বসে পা সোজা করুন এবং হাঁটু ধীরে ধীরে বাঁকিয়ে আবার সোজা করুন।

  • যোগব্যায়াম: কিছু হালকা ধরনের যোগব্যায়াম যেমন "ভুজঙ্গাসন" (Cobra Pose) বা "বৃক্ষাসন" (Tree Pose) জয়েন্টের জন্য উপকারী।

৩. পেশী শক্তিশালী করার ব্যায়ামঃ

এই ব্যায়ামগুলো জয়েন্টের সাপোর্ট বাড়াতে সাহায্য করে।

  • বডি ওয়েট স্কোয়াট: কোনো ওজন না নিয়ে আস্তে আস্তে বসার ভঙ্গি করুন এবং আবার উঠুন।

  • লেগ লিফট: মেঝেতে শুয়ে আস্তে আস্তে এক পা উপরে তুলুন এবং আবার নিচে নামিয়ে আনুন।

  • রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড: হালকা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করে পেশী শক্তিশালী করা যায়।

৪. ভারসাম্য অনুশীলনঃ

  • এক পায়ে দাঁড়ানো: একটি চেয়ার ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করুন। এতে আপনার ভারসাম্য উন্নত হবে।

যে ব্যায়ামগুলো এড়িয়ে চলবেন

কিছু ব্যায়াম জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে এবং ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। এগুলো থেকে বিরত থাকা ভালো।

  • ভারী ওজন তোলা: খুব বেশি ওজন তোলা পেশী এবং জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

  • উচ্চ-প্রভাবযুক্ত ব্যায়াম (High-impact exercises): দৌড়ানো, লাফানো বা দড়ি লাফানোর মতো ব্যায়ামগুলো জয়েন্টের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

  • বারবার একই ধরনের নড়াচড়া: এমন কোনো কাজ বা ব্যায়াম যা বারবার একই ধরনের নড়াচড়ার প্রয়োজন হয়, তা থেকে বিরত থাকুন।

নতুনদের জন্য কিছু জরুরি পরামর্শ

  • ধীরে ধীরে শুরু করুন: প্রথম দিনেই বেশি কিছু করার চেষ্টা করবেন না। ১০-১৫ মিনিট করে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।

  • শরীরের কথা শুনুন: যদি কোনো ব্যায়ামের সময় ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে সাথে সাথে থামুন।

  • উষ্ণতা ও শীতলতা: ব্যায়ামের আগে ৫-১০ মিনিট হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং করে শরীরকে উষ্ণ করুন। ব্যায়ামের পর একইভাবে শরীরকে শীতল করুন।

  • চিকিৎসকের পরামর্শ: ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তার বা ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন। তারা আপনার রোগের ধরন অনুযায়ী সঠিক ব্যায়াম বেছে নিতে সাহায্য করবেন।

আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য ব্যায়াম হলো একটি শক্তিশালী চিকিৎসা। সঠিক ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি শুধু ব্যথা কমাতেই পারবেন না, বরং আপনার জীবনযাত্রার মানও অনেক উন্নত করতে পারবেন। নিরাপদ এবং কার্যকর ব্যায়াম বেছে নিয়ে এটিকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তুলুন। মনে রাখবেন, নিয়মিততা এবং সঠিক পদ্ধতিই আপনার জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখার চাবিকাঠি।