অফিসে দীর্ঘসময় বসে থাকার ফল: জয়েন্ট ও ব্যথার সমস্যা এবং সহজ সমাধান

অফিসে একটানা বসে থাকার ফলে কি আপনার ঘাড়, কোমর বা জয়েন্টে ব্যথা হয়? আধুনিক জীবনযাত্রার এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান? তাহলে জেনে নিন এর কারণ এবং কিছু সহজ সমাধান, যা আপনি অফিসেই করতে পারবেন।

TEAM ATIQUZZAMAN

10/28/20251 min read

white and blue bird figurine
white and blue bird figurine

আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রায় অফিসের ডেস্কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা একটি সাধারণ অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, শহুরে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় বসে কাজ করে। এই দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে আমাদের শরীর অলস হয়ে পড়ে, এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন ঘাড়ে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, কোমর ব্যথা এবং জয়েন্টের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে এই সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এই ব্লগে আমরা আধুনিক জীবনযাত্রার এই প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব এবং দেখব কীভাবে কিছু সহজ সমাধান আপনাকে এই ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

কেন এই ব্যথা হয়?

অফিসে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে শুধু ক্লান্তি নয়, বরং আমাদের শরীরের গঠন এবং কার্যকারিতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি শারীরিক কারণ রয়েছে:

  • ভুলভাবে বসার কারণে চাপ

যখন আমরা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করি, তখন বেশিরভাগ মানুষই কুঁজো হয়ে সামনে ঝুঁকে থাকেন। এই ভুল বসার ভঙ্গির কারণে মেরুদণ্ড, ঘাড় এবং কাঁধের পেশী ও জয়েন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। সময়ের সাথে সাথে এই অতিরিক্ত চাপ থেকেই দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা শুরু হয়।

  • পেশীর দুর্বলতা ও ভারসাম্যহীনতা

একটানা বসে থাকলে কিছু পেশী অলস হয়ে পড়ে এবং দুর্বল হয়ে যায়, যেমন কোমর ও পেটের পেশী। অন্যদিকে, কিছু পেশী, যেমন ঘাড় ও পিঠের পেশী, অতিরিক্ত কাজ করতে থাকে। এই পেশীগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যা শরীরের স্বাভাবিক ভঙ্গি বজায় রাখতে বাধা দেয় এবং ব্যথার জন্ম দেয়।

  • জয়েন্টের শক্ত হয়ে যাওয়া

আমাদের জয়েন্টগুলো সচল থাকার জন্য তৈরি। দীর্ঘসময় নড়াচড়া না করলে জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যায়, বিশেষ করে নিতম্ব ও হাঁটুর জয়েন্ট। এতে জয়েন্টের চারপাশে থাকা কার্টিলেজ বা নরম হাড়ের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, যা নড়াচড়া করার সময় অস্বস্তি ও ব্যথার কারণ হয়।

  • রক্ত সঞ্চালনে বাধা

বসে থাকার সময় শরীরের নিচের অংশে রক্ত চলাচল কমে যায়। এর ফলে পেশী এবং টিস্যুগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে পারে না, যা ব্যথা এবং অবসাদ তৈরি করে। দীর্ঘসময় ধরে এমনটা চলতে থাকলে পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার মতো গুরুতর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

  • স্নায়ুর উপর চাপ

ভুল বসার ভঙ্গির কারণে মেরুদণ্ডের স্নায়ুর উপর চাপ পড়তে পারে। সায়াটিকা (Sciatica)-এর মতো ব্যথা, যা কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, প্রায়শই স্নায়ুর উপর চাপের কারণে ঘটে।

সহজ সমাধান: অফিসেই করুন এই অভ্যাসগুলো

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে জিমে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে না। কিছু সহজ অভ্যাস আপনার দৈনন্দিন জীবনে এনে দিতে পারে বড় পরিবর্তন।

১. বসার ভঙ্গির দিকে নজর দিন:

  • আপনার চেয়ার এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করুন যাতে পা মেঝেতে সমান্তরালভাবে থাকে।

  • পিঠ সোজা রাখুন এবং মেরুদণ্ডের নিচের অংশে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একটি ছোট বালিশ বা সাপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন।

  • আপনার মনিটর চোখের লেভেলে রাখুন, যাতে ঘাড় বাঁকা করতে না হয়।

২. নিয়মিত বিরতি নিন:

  • প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর পর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান।

  • ৫ মিনিটের জন্য হেঁটে আসুন বা হালকা স্ট্রেচিং করুন। এটি পেশী ও জয়েন্টগুলোকে সচল রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।

৩. অফিসেই করুন সহজ কিছু স্ট্রেচিং:

  • ঘাড়ের স্ট্রেচিং: ধীরে ধীরে আপনার মাথা ডান দিকে কাত করুন, যতক্ষণ না বাম পাশে টান অনুভব করেন। ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে রেখে অন্য দিকে করুন।

  • কাঁধের স্ট্রেচিং: কাঁধ দুটিকে একসঙ্গে উপরে তুলুন, পেছনে ঘোরান এবং নিচে নামিয়ে দিন। এটি কয়েকবার করুন।

  • কোমরের স্ট্রেচিং: চেয়ারে বসে কোমর ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। ১০ সেকেন্ড ধরে রেখে অন্য দিকে করুন।

  • হাতের কব্জির স্ট্রেচিং: হাত সামনে সোজা করে ধরে কব্জি উপর-নিচ করুন এবং বৃত্তাকারে ঘোরান।

৪. হাইড্রেটেড থাকুন:

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এটি শুধু শরীরের কার্যকারিতা বজায় রাখে না, বরং জয়েন্টের লুব্রিকেশন উন্নত করতেও সাহায্য করে।

৫. হালকা হাঁটাচলা:

  • লাঞ্চের সময় কিছুটা হেঁটে আসুন।

  • সহকর্মীর সাথে কথা বলার জন্য তার ডেস্কে হেঁটে যান, ইমেইল বা মেসেজ না পাঠিয়ে।

অফিসে দীর্ঘ সময় বসে থাকা আমাদের আধুনিক জীবনের একটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাইলেই এটিকে পরিবর্তন করতে পারব না। কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো থেকে নিজেকে বাঁচানো আমাদের নিজেদের হাতেই। উপরের সহজ সমাধানগুলো আপনার দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করলে শুধু ঘাড়, কোমর ও জয়েন্টের ব্যথা থেকেই মুক্তি পাবেন না, বরং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যও উন্নত হবে। মনে রাখবেন, শরীরের খেয়াল রাখা এবং ছোট ছোট পরিবর্তন করা দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে সুস্থ ও সচল রাখতে পারে।