নারীদের রিউম্যাটিক রোগ কেন বেশি হয় এবং করণীয় কী?

নারীদের মধ্যে রিউম্যাটিক রোগ কেন বেশি দেখা যায়? এর কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায়গুলো কী? এই ব্লগে জানুন নারীদের রিউম্যাটিক রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং এর মোকাবিলায় আপনার করণীয় কী।

TEAM ATIQUZZAMAN

9/28/20251 min read

রিউম্যাটিক রোগ, যা জয়েন্ট, পেশী এবং হাড়ের প্রদাহজনিত সমস্যা তৈরি করে, সাধারণত পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA), লুপাস (SLE), ফাইব্রোমায়ালজিয়া এবং শোগ্রেন'স সিন্ড্রোমের মতো অটোইমিউন রোগগুলো নারীদের মধ্যেই বেশি নির্ণিত হয়। এই রোগের কারণে শারীরিক কষ্ট, কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মান কমে যায়। প্রশ্ন হলো, কেন নারীদের মধ্যে এই রোগগুলোর প্রবণতা বেশি? এর পেছনে যেমন জেনেটিক কারণ আছে, তেমনি আছে কিছু জৈবিক ও হরমোনগত পার্থক্য। এই ব্লগে আমরা নারীদের মধ্যে রিউম্যাটিক রোগের উচ্চ ঝুঁকির কারণগুলো এবং এর মোকাবিলায় তাদের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা করব।

কেন নারীদের রিউম্যাটিক রোগ বেশি হয়?

নারীদের মধ্যে রিউম্যাটিক রোগের বেশি হওয়ার পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:

  • হরমোনগত কারণে

নারীদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো হরমোনগুলো ইমিউন সিস্টেমের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, ইস্ট্রোজেন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অতিসক্রিয় করে তুলতে পারে, যা অটোইমিউন রোগের কারণ হতে পারে। মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজের সময় হরমোনের এই পরিবর্তনগুলো রোগের সূত্রপাত বা তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

  • জেনেটিক কারণ

বিজ্ঞানীরা কিছু জিনের সন্ধান পেয়েছেন, যা অটোইমিউন রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং নারীদের মধ্যে এই জিনগুলো বেশি সক্রিয় বলে মনে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিশেষ ক্রোমোজোম (X ক্রোমোজোম) নারীদের মধ্যে দুটি থাকে, যা এই ধরনের রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

  • রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া

নারীদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুরুষদের তুলনায় ভিন্নভাবে কাজ করে। এটি প্রায়শই আরও শক্তিশালী এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল হয়। যদিও এটি সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপকারী, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ভুলবশত নিজের শরীরের টিস্যুকেই আক্রমণ করে বসে, যা রিউম্যাটিক রোগ সৃষ্টি করে।

  • পরিবেশগত কারণ

কিছু পরিবেশগত কারণ, যেমন সংক্রমণ (infections), স্ট্রেস এবং অতিরিক্ত সূর্যালোক (বিশেষ করে লুপাসের ক্ষেত্রে), নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই ট্রিগারগুলো হরমোন এবং জেনেটিক প্রবণতার সাথে মিলে রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

  • জীবনধারা ও শারীরিক চাপ

নারীরা অনেক সময় একসাথে পরিবার, সন্তান ও কাজের দায়িত্ব পালন করেন। নিয়মিত বিশ্রামের অভাব, মানসিক চাপ, ও শারীরিক পরিশ্রম রিউম্যাটিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

  • গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম

গর্ভাবস্থা, সন্তান জন্ম ও মেনোপজ নারীদের হরমোনে বড় পরিবর্তন আনে। এসব পরিবর্তনের কারণে জয়েন্টে প্রদাহ, হাড় ক্ষয় এবং ইমিউন সিস্টেমে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।

নারীদের রিউম্যাটিক রোগের সাধারণ উপসর্গ

নারীদের রিউম্যাটিক রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুব জরুরি। যেমন:

  • জয়েন্টে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও ফোলা: বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে থাকা (যা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে)।

  • তীব্র ক্লান্তি: যা কোনো কারণ ছাড়াই আসে এবং বিশ্রামেও দূর হয় না।

  • ত্বকে ফুসকুড়ি: বিশেষ করে মুখের ওপর প্রজাপতির ডানার মতো র‍্যাশ।

  • জ্বর ও ওজন হ্রাস: কোনো কারণ ছাড়াই জ্বর বা ওজন কমে যাওয়া।

  • চুল পড়া: অস্বাভাবিক পরিমাণে চুল পড়া।

নারীদের রিউম্যাটিক রোগে আক্রান্ত হলে করনীয়
১. দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি আপনি উপরের লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি লক্ষ্য করেন, তাহলে দেরি না করে একজন রিউমাটোলজিস্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় এবং স্থায়ী জয়েন্টের ক্ষতি এড়ানো যায়।

২. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
  • সুষম খাদ্য: প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এমন খাবার যেমন- মাছ, শাক-সবজি, ফল এবং বাদাম বেশি করে খান। অতিরিক্ত চিনি, লাল মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

  • নিয়মিত ব্যায়াম: হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম, যেমন- হাঁটা, সাঁতার বা যোগব্যায়াম জয়েন্টের নমনীয়তা এবং পেশীর শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ রোগের উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে। ধ্যান (meditation) বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মতো কৌশলগুলো মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

  • পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুম শরীরের স্বাভাবিক নিরাময় প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য।

৩. চিকিৎসার নিয়ম মেনে চলুন

চিকিৎসক যে ওষুধ এবং চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন, তা নিয়মিত এবং সঠিকভাবে মেনে চলুন। অনেক রোগী সুস্থ বোধ করলে ওষুধ বন্ধ করে দেন, যা রোগের পুনরায় ফিরে আসা বা আরও খারাপ হওয়ার কারণ হতে পারে।

৪. সহায়তা গ্রহণ:

লুপাস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ে বাঁচা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। একই ধরনের রোগে আক্রান্ত অন্য রোগীদের সাথে কথা বললে মানসিক সমর্থন পাওয়া যায় এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন কিছু শেখা যায়।

নারীদের মধ্যে রিউম্যাটিক রোগের উচ্চ ঝুঁকি থাকলেও, এটি প্রতিরোধের বাইরে নয়। সঠিক জ্ঞান, সচেতনতা এবং সময় মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। নিজের শরীরের লক্ষণগুলোর দিকে মনোযোগ দিন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সঠিক চিকিৎসা আপনাকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করবে এবং আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।

সরাসরি রিউমাটোলজিস্ট ডা. আতিকুজ্জামানের এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন